ঢাকা ১১:৪৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনামঃ
শিবালয়ে থেমে থাকা স্কুলবাসে আগুন: ঘুমন্ত চালক তাবেজ দগ্ধ, অবস্থা আশঙ্কাজনক ১৪ বছর ধরে ঝুঁকির সাঁকো—মঠবাড়িয়ায় ভাঙা সেতুর ওপরে ১০ হাজার মানুষের জীবনযাত্রা বন্ধুর সঙ্গে ঢাকায় এসে খণ্ডিত লাশ: ২৬ টুকরায় মিলল ব্যবসায়ী আশরাফুলের দেহ মেঘনায় সিমেন্টবোঝাই ট্রলারডুবি: দুই যুবক রানা ও শুভ নিখোঁজ রাঙ্গুনিয়ায় শ্রমিকদল নেতা মান্নানকে গুলি করে হত্যা দর্শনা থানার জামায়াতের ২০ নেতাকর্মীর বিএনপিতে যোগদান বিএনপিতে ১৭ নেতার বহিষ্কারাদেশ ও স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার ইউনূস নিজের সই করা সনদই লঙ্ঘন করেছেন: বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ ঝিনাইদহে শেখ মুজিবের ‘এক তর্জনী’ স্তম্ভ বুলডোজারে গুঁড়িয়ে দিল বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা নাটোরে গভীর রাতে মশাল মিছিল নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের কর্মীদের স্লোগানে উত্তপ্ত সিংড়া
মামুনুর রশীদ (চাকসু) সহ-সভাপতি, সিলেট জেলা বিএনপি

 একাই লড়ে যাচ্ছেন মামুনুর রশিদ যে কারণে তিনি সবার থেকে আলাদা*

  • DSK TV
  • আপডেট সময় : ০৭:৪৪:৪০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ অগাস্ট ২০২৫
  • ১৩০৭ বার পড়া হয়েছে

 একাই লড়ে যাচ্ছেন মামুনুর রশিদ যে কারণে তিনি সবার থেকে আলাদা*

রাজনীতির মাঠে যখন ঝড় ওঠে, যখন দলের সবচেয়ে কঠিন সময়ে অনেক নেতা পথ বদলে ফেলেন বা চুপ হয়ে যান, তখন কিছু মানুষ স্রোতের বিপরীতে একা দাঁড়িয়ে থাকেন। কানাইঘাট-জকিগঞ্জের রাজনীতিতে যখন ঠিক এমনই এক অন্ধকার নেমে এসেছিল, কর্মীরা হতাশ আর নেতৃত্ব দিশেহারা, তখন কোনো অদৃশ্য শক্তিতে একা লড়ে যাচ্ছিলেন মামুনুর রশিদ? ঠিক কী তাকে এতটা আপোষহীন করে তুলেছিল আর কেনই বা আজ হাজারো মানুষের ভরসার মুখ হয়ে উঠেছেন তিনি?

এই গল্প শুধু একজন রাজনীতিবিদের নয়; এটা এক অবিশ্বাস্য সাহস, ত্যাগ আর একাকী লড়াইয়ের গল্প। কিন্তু কীভাবে তিনি এই জায়গায় এলেন? কেন তিনি একা লড়তেও ভয় পাননি? চলুন, গল্পটা শুরু থেকেই শোনা যাক।

পর্ব ১: যে ঝড়ের মুখে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি

সিলেট-৫, অর্থাৎ কানাইঘাট-জকিগঞ্জ আসন। সুরমা আর কুশিয়ারার ভাঙন যেমন এই অঞ্চলের মানুষের জীবনের অংশ, তেমনি রাজনৈতিক ভাঙা-গড়াও এখানকার ইতিহাসের এক চেনা ছবি। গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ছিল বেশ অস্থির। ক্ষমতার বাইরে থাকা দলগুলোর জন্য এই সময়টা ছিল টিকে থাকার এক কঠিন পরীক্ষা। হামলা, মামলা আর রাজনৈতিক চাপের মুখে যখন অনেক বড় নেতাও নিশ্চুপ, তখন তৃণমূলের কর্মীরা ভুগছিলেন চরম হতাশায়।

কানাইঘাট-জকিগঞ্জের অবস্থাও আলাদা ছিল না। দলের ভেতরের কোন্দল, নেতৃত্বের সংকট আর বারবার রাজনৈতিক ব্যর্থতায় কর্মীদের মনোবল প্রায় শূন্যের কোঠায়। একটা সময় এমন ছিল যে, রাজপথে দলের হয়ে কথা বলার মতো নেতা খুঁজে পাওয়াও কঠিন হয়ে পড়েছিল। মনে হচ্ছিল, কানাইঘাট-জকিগঞ্জে বিএনপির রাজনৈতিক বাতিটা বুঝি নিভেই যাবে। যে সংগঠনকে ঘিরে হাজারো কর্মী স্বপ্ন দেখত, সেই সংগঠনই যেন অভিভাবকহীন। কর্মীরা ছত্রভঙ্গ, হতাশ আর নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। ঠিক এমনই এক কঠিন সময়ে, যখন অনেকেই হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন, তখন একজন মানুষ স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়েছিলেন। তার নাম মামুনুর রশিদ, যাকে এলাকার মানুষ ভালোবেসে ডাকে ‘চাকসু মামুন’ নামে।

পর্ব ২: একজন যোদ্ধার উত্থান

মামুনুর রশিদের রাজনৈতিক জীবনের শুরু ছাত্র রাজনীতি দিয়ে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ ক্যাম্পাসে। তিনি শুধু একজন মেধাবী ছাত্রই ছিলেন না, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু)-তে তার ভূমিকার জন্য সেই ছাত্রজীবন থেকেই তিনি একজন দক্ষ সংগঠক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তার চরিত্রে একটা বিষয় বরাবরই স্পষ্ট ছিল—তিনি সহজে অন্যায়ের সাথে আপোষ করেন না। তার স্পষ্ট কথা বলার সাহসই তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তুলেছিল।

যখন জাতীয় রাজনীতিতে আর স্থানীয়ভাবে দলের ওপর দুঃসময় নেমে আসে, তখন মামুনুর রশিদ চাইলেই নিরাপদ দূরত্বে থাকতে পারতেন। কিন্তু তিনি বেছে নিলেন কঠিন পথটা। কানাইঘাট উপজেলা বিএনপির সভাপতির মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকেও তিনি শুধু নামসর্বস্ব নেতা হয়ে রইলেন না। তিনি বুঝতে পারছিলেন, এই সংকটের মুহূর্তে নেতৃত্ব যদি ভয় পেয়ে পিছিয়ে যায়, তাহলে তৃণমূলের কর্মীরা চিরদিনের জন্য বিশ্বাস হারিয়ে ফেলবে।

আর তাই, তিনি একা মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নেন। যখন বড় সভা-সমাবেশ করা প্রায় অসম্ভব, তখন তিনি মানুষের কাছে পৌঁছানোর নতুন পথ খুঁজলেন। তিনি জানতেন, রাজনীতির আসল শক্তি কোনো পদ-পদবি নয়, এর আসল শক্তি হলো জনগণ আর তৃণমূলের কর্মীরা। এই বিশ্বাস নিয়েই তিনি তার একাকী লড়াইটা শুরু করেন।

পর্ব ৩: তৃণমূলকে আগলে রাখার সংগ্রাম

মামুনুর রশিদের লড়াইটা ছিল কয়েকটা ফ্রন্টে। একদিকে দলের ভেঙে পড়া মনোবলকে জাগিয়ে তোলা, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা। তিনি বুঝেছিলেন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বসে বিবৃতি দিয়ে এই লড়াই জেতা যাবে না। তাই তিনি ফিরে গেলেন রাজনীতির শেকড়ে—তৃণমূলের কাছে।

তিনি কানাইঘাট আর জকিগঞ্জের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটে বেড়িয়েছেন। ওয়ার্ড থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে কর্মীদের সংগঠিত করতে দিনরাত কাজ করেছেন। এমনও হয়েছে, যেখানে কোনো ইউনিয়নে সভা ডাকার মতো পরিস্থিতি ছিল না, সেখানে মামুনুর রশিদ নিজে গিয়ে কর্মীদের সাহস জুগিয়েছেন। তার সহকর্মীরা বলেন, “আমরা যখন হতাশ হয়ে পড়েছিলাম, তখন মামুন ভাই একাই আমাদের ফোন করে বলতেন, ভয় পেলে চলবে না, মাঠে থাকতে হবে।”

তার লড়াইটা শুধু দলীয় কর্মসূচিতে আটকে ছিল না। কানাইঘাট-জকিগঞ্জের সাধারণ মানুষের সমস্যাগুলোকেও তিনি তার রাজনীতির অংশ করে নিয়েছিলেন। ভাঙা রাস্তাঘাট মানুষের জন্য কতটা কষ্টের, তা তিনি জানতেন। শেওলা-জকিগঞ্জ রোড, কালিগঞ্জ-জকিগঞ্জ রোড বা গাজী বুরহান উদ্দিন (রহ.) রোডের বেহাল দশা নিয়ে তিনি বারবার কথা বলেছেন।

শুধু তাই নয়, সুরমা ও কুশিয়ারার ভয়াবহ নদী ভাঙন যখন প্রতি বছর মানুষের ঘরবাড়ি, জমি কেড়ে নিচ্ছিল, তখন তিনি এই সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপের জন্য সোচ্চার হয়েছেন। এমনকি যখন সীমান্ত এলাকায় দেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন উঠেছে, তখনও তিনি প্রতিবাদ জানাতে দ্বিধা করেননি। তার এই পদক্ষেপগুলো সাধারণ মানুষের মনে ছাপ ফেলেছিল। তারা বুঝতে পারল, এই নেতা শুধু ভোটের রাজনীতি করেন না, তিনি তাদের সুখ-দুঃখের অংশীদার। বন্যার সময় যখন হাজারো মানুষ পানিবন্দী, তখনও মামুনুর রশিদকে দেখা গেছে ত্রাণ হাতে দুর্গম এলাকায়। তার এই মানবিক কাজগুলো তাকে দলীয় পরিচয়ের ঊর্ধ্বে মানুষের নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে।

পর্ব ৪: নেতৃত্বের আসল পরীক্ষা

প্রত্যেক নেতার জীবনে এমন সময় আসে, যা তার সাহস আর আদর্শের চূড়ান্ত পরীক্ষা নেয়। মামুনুর রশিদের জীবনেও সেই মুহূর্ত এসেছে বারবার। এমনও সময় গেছে, যখন কোনো মিছিল বা মানববন্ধনের ডাকে তিনি একাই দাঁড়িয়ে থেকেছেন, কিন্তু পিছু হটেননি।

তার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল কর্মীদের মনে এই বিশ্বাস ফিরিয়ে আনা যে, ত্যাগ কখনো বৃথা যায় না। তিনি তার প্রতিটি কথায়, প্রতিটি কাজে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার বার্তা দিয়েছেন। তিনি কর্মীদের শিখিয়েছেন, সংখ্যা দিয়ে নয়, আদর্শের শক্তি দিয়েই লড়াই করতে হয়। তার এই পথচলা মোটেও সহজ ছিল না। তাকে যেমন বাইরের চাপ সামলাতে হয়েছে, তেমনি দলের ভেতরেও নানা সময় প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে। কিন্তু কোনো কিছুই তাকে তার লক্ষ্য থেকে সরাতে পারেনি।

যে কর্মীরা একদিন হতাশায় ডুবে গিয়েছিল, তার ডাকে তাদের পদচারণায় আবারও রাজপথ মুখরিত হতে শুরু করে। এটা ছিল মামুনুর রশিদের নেতৃত্বের এক বড় বিজয়। তিনি প্রমাণ করেছেন, একজন নেতা যদি সততা আর সাহস নিয়ে একাই লড়াই শুরু করেন, তাহলে সময়ের সাথে সাথে হাজারো মানুষ তার পেছনে এসে দাঁড়ায়। তিনি দেখিয়েছেন, সত্যিকারের নেতা তিনিই, যিনি দুঃসময়ে কর্মীদের সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়ান।

পর্ব ৫: কেন তিনি সবার থেকে আলাদা?

তাহলে প্রশ্ন আসেই, মামুনুর রশিদ কেন অন্যদের থেকে আলাদা? কেন কানাইঘাট-জকিগঞ্জের মানুষ তাকে ঘিরে নতুন করে স্বপ্ন দেখছে?

প্রথমত, তার সাহস। তিনি সেই নেতা, যিনি স্রোতের বিপরীতে একা লড়ার রাখেন। যখন অনেকেই চুপ ছিলেন, তখন তার গলা ছিল সোচ্চার।

দ্বিতীয়ত, তার তৃণমূল সংযোগ। তিনি পদ-পদবির রাজনীতিতে আটকে নেই, বিশ্বাস করেন জনগণের শক্তিতে। তাই তিনি সবসময় সাধারণ কর্মী আর মানুষের পাশে থেকেছেন। ওয়ার্ড পর্যায় থেকে দলকে গোছানোর মতো কঠিন কাজটা তিনি নিজ হাতে করেছেন, যা অনেক নেতাই করতে চান না।

তৃতীয়ত, তার সততা আর স্পষ্টবাদিতা। তার রাজনীতিতে কোনো লুকোচুরি নেই। তিনি যা বিশ্বাস করেন, তাই বলেন এবং যা বলেন, তা করে দেখানোর চেষ্টা করেন।

আর চতুর্থত, তিনি কানাইঘাট-জকিগঞ্জের মাটির সমস্যাগুলোকে নিজের করে নিয়েছেন। ভাঙা রাস্তা, নদী ভাঙন, স্বাস্থ্যসেবার সংকট—এই সব সমস্যা নিয়ে তিনি যেভাবে আওয়াজ তোলেন, তা তাকে শুধু রাজনীতিবিদ নয়, একজন সত্যিকারের জনদরদী নেতা হিসেবে চিনিয়ে দেয়।

তার এই একাকী লড়াইয়ের ফল এখন স্পষ্ট। কানাইঘাট-জকিগঞ্জে বিএনপি এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সংগঠিত। কর্মীরা ফিরে পেয়েছে তাদের হারানো আত্মবিশ্বাস। আর এর পেছনের মূল কারিগর নিঃসন্দেহে মামুনুর রশিদ।

রাজনীতিতে নেতা অনেকেই হন, কিন্তু দুঃসময়ের কাণ্ডারি হওয়ার যোগ্যতা সবার থাকে না। মামুনুর রশিদের গল্প আমাদের এটাই বলে যে, আদর্শের প্রতি সৎ থাকলে আর মানুষের ওপর বিশ্বাস রাখলে, একা শুরু করা লড়াইও একসময় গণমানুষের আন্দোলনে রূপ নেয়। তিনি কানাইঘাট-জকিগঞ্জের রাজনীতিতে আশার এক নতুন প্রদীপ জ্বালিয়েছেন, যার আলোতে হাজারো কর্মী এখন নতুন দিনের স্বপ্ন দেখছে।

মামুনুর রশিদের মতো নেতারাই হয়তো আমাদের রাজনীতিতে আশা টিকিয়ে রাখেন। তার এই সাহসের গল্প যদি আপনাকে একটুও অনুপ্রাণিত করে, তবে শেয়ার করে তার বার্তাটি সবার কাছে পৌঁছে দিন। আর কানাইঘাট-জকিগঞ্জের ভবিষ্যৎ এবং মামুনুর রশিদের এই লড়াই নিয়ে আপনার কী মত? নিচে কমেন্ট করে জানান।

মামুনুর রশীদ (চাকসু)

সহ-সভাপতি, সিলেট জেলা বিএনপি। ধানের শীষের মনোনয়ন প্রত্যাশী, সিলেট-৫ (জকিগঞ্জ-কানাইঘাট) সংসদীয় আসন

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

শিবালয়ে থেমে থাকা স্কুলবাসে আগুন: ঘুমন্ত চালক তাবেজ দগ্ধ, অবস্থা আশঙ্কাজনক

মামুনুর রশীদ (চাকসু) সহ-সভাপতি, সিলেট জেলা বিএনপি

 একাই লড়ে যাচ্ছেন মামুনুর রশিদ যে কারণে তিনি সবার থেকে আলাদা*

আপডেট সময় : ০৭:৪৪:৪০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ অগাস্ট ২০২৫

 একাই লড়ে যাচ্ছেন মামুনুর রশিদ যে কারণে তিনি সবার থেকে আলাদা*

রাজনীতির মাঠে যখন ঝড় ওঠে, যখন দলের সবচেয়ে কঠিন সময়ে অনেক নেতা পথ বদলে ফেলেন বা চুপ হয়ে যান, তখন কিছু মানুষ স্রোতের বিপরীতে একা দাঁড়িয়ে থাকেন। কানাইঘাট-জকিগঞ্জের রাজনীতিতে যখন ঠিক এমনই এক অন্ধকার নেমে এসেছিল, কর্মীরা হতাশ আর নেতৃত্ব দিশেহারা, তখন কোনো অদৃশ্য শক্তিতে একা লড়ে যাচ্ছিলেন মামুনুর রশিদ? ঠিক কী তাকে এতটা আপোষহীন করে তুলেছিল আর কেনই বা আজ হাজারো মানুষের ভরসার মুখ হয়ে উঠেছেন তিনি?

এই গল্প শুধু একজন রাজনীতিবিদের নয়; এটা এক অবিশ্বাস্য সাহস, ত্যাগ আর একাকী লড়াইয়ের গল্প। কিন্তু কীভাবে তিনি এই জায়গায় এলেন? কেন তিনি একা লড়তেও ভয় পাননি? চলুন, গল্পটা শুরু থেকেই শোনা যাক।

পর্ব ১: যে ঝড়ের মুখে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি

সিলেট-৫, অর্থাৎ কানাইঘাট-জকিগঞ্জ আসন। সুরমা আর কুশিয়ারার ভাঙন যেমন এই অঞ্চলের মানুষের জীবনের অংশ, তেমনি রাজনৈতিক ভাঙা-গড়াও এখানকার ইতিহাসের এক চেনা ছবি। গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ছিল বেশ অস্থির। ক্ষমতার বাইরে থাকা দলগুলোর জন্য এই সময়টা ছিল টিকে থাকার এক কঠিন পরীক্ষা। হামলা, মামলা আর রাজনৈতিক চাপের মুখে যখন অনেক বড় নেতাও নিশ্চুপ, তখন তৃণমূলের কর্মীরা ভুগছিলেন চরম হতাশায়।

কানাইঘাট-জকিগঞ্জের অবস্থাও আলাদা ছিল না। দলের ভেতরের কোন্দল, নেতৃত্বের সংকট আর বারবার রাজনৈতিক ব্যর্থতায় কর্মীদের মনোবল প্রায় শূন্যের কোঠায়। একটা সময় এমন ছিল যে, রাজপথে দলের হয়ে কথা বলার মতো নেতা খুঁজে পাওয়াও কঠিন হয়ে পড়েছিল। মনে হচ্ছিল, কানাইঘাট-জকিগঞ্জে বিএনপির রাজনৈতিক বাতিটা বুঝি নিভেই যাবে। যে সংগঠনকে ঘিরে হাজারো কর্মী স্বপ্ন দেখত, সেই সংগঠনই যেন অভিভাবকহীন। কর্মীরা ছত্রভঙ্গ, হতাশ আর নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। ঠিক এমনই এক কঠিন সময়ে, যখন অনেকেই হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন, তখন একজন মানুষ স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়েছিলেন। তার নাম মামুনুর রশিদ, যাকে এলাকার মানুষ ভালোবেসে ডাকে ‘চাকসু মামুন’ নামে।

পর্ব ২: একজন যোদ্ধার উত্থান

মামুনুর রশিদের রাজনৈতিক জীবনের শুরু ছাত্র রাজনীতি দিয়ে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ ক্যাম্পাসে। তিনি শুধু একজন মেধাবী ছাত্রই ছিলেন না, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু)-তে তার ভূমিকার জন্য সেই ছাত্রজীবন থেকেই তিনি একজন দক্ষ সংগঠক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তার চরিত্রে একটা বিষয় বরাবরই স্পষ্ট ছিল—তিনি সহজে অন্যায়ের সাথে আপোষ করেন না। তার স্পষ্ট কথা বলার সাহসই তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তুলেছিল।

যখন জাতীয় রাজনীতিতে আর স্থানীয়ভাবে দলের ওপর দুঃসময় নেমে আসে, তখন মামুনুর রশিদ চাইলেই নিরাপদ দূরত্বে থাকতে পারতেন। কিন্তু তিনি বেছে নিলেন কঠিন পথটা। কানাইঘাট উপজেলা বিএনপির সভাপতির মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকেও তিনি শুধু নামসর্বস্ব নেতা হয়ে রইলেন না। তিনি বুঝতে পারছিলেন, এই সংকটের মুহূর্তে নেতৃত্ব যদি ভয় পেয়ে পিছিয়ে যায়, তাহলে তৃণমূলের কর্মীরা চিরদিনের জন্য বিশ্বাস হারিয়ে ফেলবে।

আর তাই, তিনি একা মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নেন। যখন বড় সভা-সমাবেশ করা প্রায় অসম্ভব, তখন তিনি মানুষের কাছে পৌঁছানোর নতুন পথ খুঁজলেন। তিনি জানতেন, রাজনীতির আসল শক্তি কোনো পদ-পদবি নয়, এর আসল শক্তি হলো জনগণ আর তৃণমূলের কর্মীরা। এই বিশ্বাস নিয়েই তিনি তার একাকী লড়াইটা শুরু করেন।

পর্ব ৩: তৃণমূলকে আগলে রাখার সংগ্রাম

মামুনুর রশিদের লড়াইটা ছিল কয়েকটা ফ্রন্টে। একদিকে দলের ভেঙে পড়া মনোবলকে জাগিয়ে তোলা, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা। তিনি বুঝেছিলেন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বসে বিবৃতি দিয়ে এই লড়াই জেতা যাবে না। তাই তিনি ফিরে গেলেন রাজনীতির শেকড়ে—তৃণমূলের কাছে।

তিনি কানাইঘাট আর জকিগঞ্জের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটে বেড়িয়েছেন। ওয়ার্ড থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে কর্মীদের সংগঠিত করতে দিনরাত কাজ করেছেন। এমনও হয়েছে, যেখানে কোনো ইউনিয়নে সভা ডাকার মতো পরিস্থিতি ছিল না, সেখানে মামুনুর রশিদ নিজে গিয়ে কর্মীদের সাহস জুগিয়েছেন। তার সহকর্মীরা বলেন, “আমরা যখন হতাশ হয়ে পড়েছিলাম, তখন মামুন ভাই একাই আমাদের ফোন করে বলতেন, ভয় পেলে চলবে না, মাঠে থাকতে হবে।”

তার লড়াইটা শুধু দলীয় কর্মসূচিতে আটকে ছিল না। কানাইঘাট-জকিগঞ্জের সাধারণ মানুষের সমস্যাগুলোকেও তিনি তার রাজনীতির অংশ করে নিয়েছিলেন। ভাঙা রাস্তাঘাট মানুষের জন্য কতটা কষ্টের, তা তিনি জানতেন। শেওলা-জকিগঞ্জ রোড, কালিগঞ্জ-জকিগঞ্জ রোড বা গাজী বুরহান উদ্দিন (রহ.) রোডের বেহাল দশা নিয়ে তিনি বারবার কথা বলেছেন।

শুধু তাই নয়, সুরমা ও কুশিয়ারার ভয়াবহ নদী ভাঙন যখন প্রতি বছর মানুষের ঘরবাড়ি, জমি কেড়ে নিচ্ছিল, তখন তিনি এই সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপের জন্য সোচ্চার হয়েছেন। এমনকি যখন সীমান্ত এলাকায় দেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন উঠেছে, তখনও তিনি প্রতিবাদ জানাতে দ্বিধা করেননি। তার এই পদক্ষেপগুলো সাধারণ মানুষের মনে ছাপ ফেলেছিল। তারা বুঝতে পারল, এই নেতা শুধু ভোটের রাজনীতি করেন না, তিনি তাদের সুখ-দুঃখের অংশীদার। বন্যার সময় যখন হাজারো মানুষ পানিবন্দী, তখনও মামুনুর রশিদকে দেখা গেছে ত্রাণ হাতে দুর্গম এলাকায়। তার এই মানবিক কাজগুলো তাকে দলীয় পরিচয়ের ঊর্ধ্বে মানুষের নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে।

পর্ব ৪: নেতৃত্বের আসল পরীক্ষা

প্রত্যেক নেতার জীবনে এমন সময় আসে, যা তার সাহস আর আদর্শের চূড়ান্ত পরীক্ষা নেয়। মামুনুর রশিদের জীবনেও সেই মুহূর্ত এসেছে বারবার। এমনও সময় গেছে, যখন কোনো মিছিল বা মানববন্ধনের ডাকে তিনি একাই দাঁড়িয়ে থেকেছেন, কিন্তু পিছু হটেননি।

তার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল কর্মীদের মনে এই বিশ্বাস ফিরিয়ে আনা যে, ত্যাগ কখনো বৃথা যায় না। তিনি তার প্রতিটি কথায়, প্রতিটি কাজে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার বার্তা দিয়েছেন। তিনি কর্মীদের শিখিয়েছেন, সংখ্যা দিয়ে নয়, আদর্শের শক্তি দিয়েই লড়াই করতে হয়। তার এই পথচলা মোটেও সহজ ছিল না। তাকে যেমন বাইরের চাপ সামলাতে হয়েছে, তেমনি দলের ভেতরেও নানা সময় প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে। কিন্তু কোনো কিছুই তাকে তার লক্ষ্য থেকে সরাতে পারেনি।

যে কর্মীরা একদিন হতাশায় ডুবে গিয়েছিল, তার ডাকে তাদের পদচারণায় আবারও রাজপথ মুখরিত হতে শুরু করে। এটা ছিল মামুনুর রশিদের নেতৃত্বের এক বড় বিজয়। তিনি প্রমাণ করেছেন, একজন নেতা যদি সততা আর সাহস নিয়ে একাই লড়াই শুরু করেন, তাহলে সময়ের সাথে সাথে হাজারো মানুষ তার পেছনে এসে দাঁড়ায়। তিনি দেখিয়েছেন, সত্যিকারের নেতা তিনিই, যিনি দুঃসময়ে কর্মীদের সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়ান।

পর্ব ৫: কেন তিনি সবার থেকে আলাদা?

তাহলে প্রশ্ন আসেই, মামুনুর রশিদ কেন অন্যদের থেকে আলাদা? কেন কানাইঘাট-জকিগঞ্জের মানুষ তাকে ঘিরে নতুন করে স্বপ্ন দেখছে?

প্রথমত, তার সাহস। তিনি সেই নেতা, যিনি স্রোতের বিপরীতে একা লড়ার রাখেন। যখন অনেকেই চুপ ছিলেন, তখন তার গলা ছিল সোচ্চার।

দ্বিতীয়ত, তার তৃণমূল সংযোগ। তিনি পদ-পদবির রাজনীতিতে আটকে নেই, বিশ্বাস করেন জনগণের শক্তিতে। তাই তিনি সবসময় সাধারণ কর্মী আর মানুষের পাশে থেকেছেন। ওয়ার্ড পর্যায় থেকে দলকে গোছানোর মতো কঠিন কাজটা তিনি নিজ হাতে করেছেন, যা অনেক নেতাই করতে চান না।

তৃতীয়ত, তার সততা আর স্পষ্টবাদিতা। তার রাজনীতিতে কোনো লুকোচুরি নেই। তিনি যা বিশ্বাস করেন, তাই বলেন এবং যা বলেন, তা করে দেখানোর চেষ্টা করেন।

আর চতুর্থত, তিনি কানাইঘাট-জকিগঞ্জের মাটির সমস্যাগুলোকে নিজের করে নিয়েছেন। ভাঙা রাস্তা, নদী ভাঙন, স্বাস্থ্যসেবার সংকট—এই সব সমস্যা নিয়ে তিনি যেভাবে আওয়াজ তোলেন, তা তাকে শুধু রাজনীতিবিদ নয়, একজন সত্যিকারের জনদরদী নেতা হিসেবে চিনিয়ে দেয়।

তার এই একাকী লড়াইয়ের ফল এখন স্পষ্ট। কানাইঘাট-জকিগঞ্জে বিএনপি এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সংগঠিত। কর্মীরা ফিরে পেয়েছে তাদের হারানো আত্মবিশ্বাস। আর এর পেছনের মূল কারিগর নিঃসন্দেহে মামুনুর রশিদ।

রাজনীতিতে নেতা অনেকেই হন, কিন্তু দুঃসময়ের কাণ্ডারি হওয়ার যোগ্যতা সবার থাকে না। মামুনুর রশিদের গল্প আমাদের এটাই বলে যে, আদর্শের প্রতি সৎ থাকলে আর মানুষের ওপর বিশ্বাস রাখলে, একা শুরু করা লড়াইও একসময় গণমানুষের আন্দোলনে রূপ নেয়। তিনি কানাইঘাট-জকিগঞ্জের রাজনীতিতে আশার এক নতুন প্রদীপ জ্বালিয়েছেন, যার আলোতে হাজারো কর্মী এখন নতুন দিনের স্বপ্ন দেখছে।

মামুনুর রশিদের মতো নেতারাই হয়তো আমাদের রাজনীতিতে আশা টিকিয়ে রাখেন। তার এই সাহসের গল্প যদি আপনাকে একটুও অনুপ্রাণিত করে, তবে শেয়ার করে তার বার্তাটি সবার কাছে পৌঁছে দিন। আর কানাইঘাট-জকিগঞ্জের ভবিষ্যৎ এবং মামুনুর রশিদের এই লড়াই নিয়ে আপনার কী মত? নিচে কমেন্ট করে জানান।

মামুনুর রশীদ (চাকসু)

সহ-সভাপতি, সিলেট জেলা বিএনপি। ধানের শীষের মনোনয়ন প্রত্যাশী, সিলেট-৫ (জকিগঞ্জ-কানাইঘাট) সংসদীয় আসন